Advertisement

Main Ad

প্রযুক্তিবিদ্যা


আধুনিক যুগকে বলা হয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ । মানবজীবনে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেএ হল শিক্ষা । স্বাভাবিকভাবে অন্যান্য সকল ক্ষেত্রের মতো শিক্ষার বহুমুখী উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা নানাভাবে প্রযুক্ত হচ্ছে । শিক্ষণ ও শিখনের ক্ষেএে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে । ফলে শিক্ষা তার সনাতন পদ্ধতির খোলস ছেড়ে নবরুপে আবির্ভূত হয়েছে ।

        
              -: ব্যুৎপত্তিগত অর্থ :-

'প্রযুক্তিবিদ্যার' ইংরেজি প্রতিশব্দ হল   'Technology' । এই শব্দটি দুটি গ্ৰিক শব্দ 'Technic' যার অর্থ হল শিপ্ল (Art) বা দক্ষতা (Skill) এবং 'Logia' যার অর্থ হল বিজ্ঞান (Science) । Technology শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল, কোনো কলা বা দক্ষতা নিয়ে অনুসন্ধান করার বিজ্ঞান । 
Page (১৯৭৬) বলেছেন, "Technology is the application of scientific knowledge to a practical purpose ( problem). 
অর্থাৎ, প্রযুক্তিবিদ্যা হল কোনো বিশেষ ব্যাবহারিক উদ্দেশ্য বা সমস্যা সমাধানের জন্য বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের প্রয়োগ ।

-: শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যার অর্থ :-

শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষাক্ষেত্রে নানা ধরনের যান্ত্রিক কৌশল বা যন্ত্রের ব্যবহার থেকে উদ্ভূত হয়েছে । শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা হল ৫টি M -এর সমন্বয়িত রুপ । এগুলি হল-   Man (মানুষ),  Mechanic (যন্ত্র),   Material (বস্তুসামগ্ৰী),  Media (মাধ্যম),  Method (পদ্ধতি) । এই পাঁচটি  'M' পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এবং বিশেষ শিক্ষামূলক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য একযোগে কাজ করে চলে ।

শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যার লক্ষ্য হল-
শিক্ষার উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তু, শিক্ষণ, শিখন, শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষক শিক্ষার্থীর আচরণ, পারস্পরিক সম্পর্ক ইত্যাদি উপাদানগুলিকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শিক্ষার প্রভাবকে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়া ।


          -: শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যার সংজ্ঞা :-

       বিভিন্ন শিক্ষাবিদ বিভিন্নভাবে শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যার সংজ্ঞা দিয়েছেন, নিম্নে আলোচনা করা হল-
১. Deceoco (১৯৭১) বলেছেন, "Educational Technology is in the form of detailed application of the psychology of learning to practical teaching problem."
অর্থাৎ,  বাস্তব পরিস্থিতিতে শিক্ষন সমস্যাগুলিতে মনস্তত্ত্বের প্রয়োগের পুঙ্খানুপুঙ্খ রুপ হল শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা ।

২. Richmond -এর মতে, "Educational Technology is concerned with providing appropriately designed
learning situations which holding in view of the objective of teaching or training, bring to bear the best means of instruction."
অর্থাৎ, শিক্ষার উদ্দেশ্য অনুযায়ী উপযুক্ত শিক্ষণ-শিখন পরিবেশ ও কৌশল রচনা করতে যে বিজ্ঞান সাহায্য করে, তা-ই হল শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা ।

এককথায় বলা যায়, শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা হল শিক্ষার উদ্দেশ্যপূরনে শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়ার কর্ম দক্ষতার উন্নতি, উপযুক্ত বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা সহায়ক উপকরণ তৈরি, তার যথাযথ প্রয়োগ এবং মূল্যায়ন করার সামগ্ৰিক কৌশল ।

        
      -: শিক্ষাবিজ্ঞানে প্রযুক্তিবিদ্যা :- 

শিক্ষার উদ্দেশ্যপূরণে শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়া কার্যকারিতা ও কর্মদক্ষতার উন্নতিতে বৈজ্ঞানিক নীতিগুলির দিকসমূহ হল শিক্ষাবিজ্ঞানের প্রযুক্তিবিদ্যা ।

শিক্ষাবিজ্ঞানে প্রযুক্তিবিদ্যার উদ্ভব হয়েছে Programme পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে ।

শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা (Educational Technology)  শিক্ষাবিজ্ঞানে প্রযুক্তিবিদ্যা (Educational in Technology in Education),  শিক্ষাবিজ্ঞানের প্রযুক্তিবিদ্যার (Technology of Education)  সমন্বয়ে গঠিত ।

শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা = শিক্ষাবিজ্ঞানে প্রযুক্তিবিদ্যার প্রয়োগ + শিক্ষাবিজ্ঞানে প্রযুক্তিকরণ ।


শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যার সংজ্ঞাগুলি বিশ্লেষণ করলে যেসকল সাধারণ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তা হল-

১. বৈজ্ঞানিক নীতির প্রয়োগ : শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা হল শিক্ষাক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক নীতিসমূহের সঠিক প্রয়োগ পদ্ধতি ।

২. শিক্ষার লক্ষ্য বাস্তবায়ন : শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষার লক্ষ্যসমূহকে কার্যকারীভাবে বাস্তবায়িত করার জন্য শিখন পরিবেশ রচনার ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করে ।

৩. পরিমাপ কৌশলের নকশা প্রস্তুত : শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা শিখনের পারদর্শিতার পরীক্ষা করা, যাচাই করা ও মূল্যায়ন করার জন্য বিভিন্ন পরিমাপ কৌশলের নকশা প্রস্তুতের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ।
৪. শিখন প্রক্রিয়াকে সহজ ও দ্রুত করা : শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা পরিবেশ, মাধ্যম এবং পদ্ধতি নিয়ন্ত্রন করে শিখন প্রক্রিয়াকে সহজ ও দ্রুত করে ।

৫. শিক্ষার ইলেকট্রনিক মাধ্যমের ব্যবহার : শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষায় ইলেকট্রনিক মাধ্যমের ব্যবহার করে, শিক্ষণ ও শিখন প্রক্রিয়াকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করে তোলে ।

৬. যোগাযোগের মাধ্যম : শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা যোগাযোগের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম ।


      -: শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যার পরিধি :- 

শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যার পরিধি মূর্ত শিক্ষা প্রক্রিয়া থেকে বিমূর্ত শিক্ষা প্রক্রিয়া বা আরও সূক্ষ্ম ক্ষেএ পর্যন্ত প্রসারিত । বিশেষ করে শিক্ষাবিজ্ঞানের তিনটি অঞ্চলে শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যার পরিধি অধিক বিস্তৃত । তা হল-

১. সাধারণ শিক্ষামূলক প্রশাসন ও পরিচালনগত প্রযুক্তি ।

২. সাধারণ শিক্ষাগত পরীক্ষণ ও মূল্যায়ন যাচাই সম্বন্ধীয় প্রযুক্তি ।

৩. নির্দেশদানের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত প্রযুক্তি ।

শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যার পরিধি হিসাবে রাওনএা নিম্নলিখিত ক্ষেএগুলির কথা উল্লেখ করেছেন ।

১. শিক্ষার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যগুলি চিহ্নিত করা ।

২. শিক্ষামূলক পরিবেশের পরিকল্পনা করা ।

৩. শিক্ষামূলক বিষয়বস্তুর বিশ্লেষণ ও তার কাঠামো গঠন করা ।


১. শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শনাক্তকরণ : শিক্ষার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নির্ধারণে শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা যথেষ্ট সহায়তা করে । শিক্ষার চরম লক্ষ্যগুলিকে বাস্তবধর্মী ও পরিমাপযোগ্য করে তুলতে বিষয় ভূমিকা পালন করে ।

২. শিক্ষার্থীর আচরণ বিশ্লেষণ : শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যার উদ্দেশ্য হল বিজ্ঞানসম্মত ভাবে শিক্ষার্থীর আচরণকে বিশ্লেষণ করতে সহায়তা করা ।

৩. প্রেষণা সঞ্চার : শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের শিক্ষনে প্রেষনা সঞ্চার করা ।

৪. উপযুক্ত শিক্ষোপকরন নির্বাচন : শিক্ষার্থীদের শিখনকে আরও কার্যকরী ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করে তুলতে সাহায্য করে শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা ।



শিক্ষণ ও শিখন প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করতে শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যার অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ । শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যার সুবিধাগুলি হল- 

১. ব্যক্তিগত নির্দেশদান : ব্যক্তিগতভাবে নির্দেশ দানের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিবিদ্যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । তা সম্ভব হয় স্বয়ং নির্দেশনামূলক Programme-এর মাধ্যমে ।

২. দূরাগত শিক্ষা : শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা দূরাগত শিক্ষা কর্মসূচির ক্ষেএে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । দূরাগত শিক্ষার মাধ্যমে মানবসম্পদের যথাযথ ব্যবহারের উদ্দেশ্যে নিয়ন্ত্রিত ও বিধি বহির্ভূত শিক্ষা কর্মসূচি শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা প্রসারে বিশেষভাবে সহায়তা দান করে থাকে ।

৩. শিক্ষায় সমসুযোগ : ভৌগলিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি অবস্থা গ্ৰাহ্য না করে তাদের শিক্ষায় সমসুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যা বিশেষভাবে সহায়তা করে । বর্তমানে দূরাগত ও মুক্ত শিক্ষা প্রযুক্তিবিদ্যার অন্তর্ভুক্ত ।

৪. তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ : বর্তমানে প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে যে-কোনো প্রকারের বিপুল পরিমাণ ডিজিটাল তথ্যকে সংরক্ষিত করা যায় । এই তথ্যগুলির মধ্যে কোনো পাঠ্য বিষয়ের বিষয়বস্তুধর্মী চিএ ইত্যাদি সংরক্ষণ করা যায় ।

Post a Comment

0 Comments