মুঘল সম্রাট আকবরের কূটনৈতিক বিচক্ষণতার শ্রেষ্ঠ পরিচয় ছিল তার রাজপুত নীতি। ভারতীয় শৌর্যবীর্যের প্রতীক রাজপুতদের সঙ্গে সম্রাট আকবর মৈত্রীর সম্পর্ক তৈরি করতে সচেষ্ট ছিলেন।
রাজপুতদের সম্পর্কে আকবরের গৃহীত নীতি :
রাজপুতদের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য সম্রাট আকবর কয়েকটি নীতি অনুসরণ করেছিলেন। যেমন—বৈবাহিক সম্পর্কের নীতি, উচ্চ রাজপদে নিয়োগের নীতি, বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের নীতি এবং যুদ্ধনীতি।
বৈবাহিক সম্পর্কের নীতি : সম্রাট আকবর অম্বরের রাজকন্যা যোধাবাঈ-কে, বিকানির ও যোধপুরের
রাজপুত রাজকন্যাদের বিবাহ করেন। তা ছাড়া আকবর তার পুত্র জাহাঙ্গির এর সঙ্গেও
রাজপুত রাজকন্যার বিবাহ দেন।
উচ্চ রাজপদে নিয়োগ নীতি : সম্রাট আকবর রাজপুতদের উচ্চপদে নিয়োগ করে তাদের আনুগত্য লাভ করেছিলেন। রাজা বিহারীমল, ভগবানদাস, মানসিংহ প্রমুখ রাজপুতদের তিনি মনসবদার হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন।
বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান নীতি : রাজপুতদের সাহায্য ও সহযোগিতা লাভের জন্য আকবর তাদের উপর থেকে তীর্থকর বা জিজিয়া কর তুলে দেন এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার সিদ্ধান্ত নেন।
যুদ্ধনীতি : অনেক রাজপুত রাজ্য আকবরের বশ্যতাস্বীকার করলেও মেওয়াড়, রণথম্ভোর প্রভৃতি রাজ্তপুত
যোধাবাঈ রাজ্যগুলি কোন ভাবেই আকবরের বশ্যতাস্বীকার করতে রাজি হয়নি। তাই আকবর মেওয়াড়ের
বিরুদ্ধে যুদ্ধনীতি অনুসরণ করেন। মেওয়াডের রানা উদয় সিংহ ও তাঁর পুত্র রানা প্রতাপ সিংহ আকবরের বিরুদ্ধে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করেন। রানা প্রতাপ সিংহ ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দে হলদিঘাটির যশ্বে আকবরের বাহিনীর হাতে পরাজিত হলেও তার বশ্যতাস্বীকার করেননি। আকবর মৈত্রী ও যুদ্ধনীতি অনুসরণ করে রাজপুতদের নিজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হন এবং মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত সুদৃঢ় হয়।
0 Comments
Please do not enter any spam link in the comment box.