মাধ্যমিক জীবনবিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর
1. নাইট্রোজেন চক্রের যে কোনো তিনটি ধাপে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা বিশ্লেষণ করো। "বিলাসবহুল ও আরামদায়ক জীবনযাত্রা বায়ুদূষণের একটি অন্যতম প্রধান কারণ" যুক্তিসহ উক্তিটি সমর্থন করো।
Ans: নাইট্রোজেন চক্রের তিনটি ধাপে ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা:
1) নাইট্রোজেন সংবন্ধন মাটির জীবাণু যেমন- ক্লসট্রিডিয়াম, অ্যাজোটোব্যাকটর দ্বারা মাটিতে বায়ুর নাইট্রোজেন জমা হয়। এছাড়া রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা বায়ুর নাইট্রোজেন মাটিতে আসে অ্যামেনিয়া হিসাবে।
2) আমোনিফিকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যামোনিফাইং ব্যাকটেরিয়া (যেমন ব্যাসিলাস মাইকয়ডিস) মৃত জীবদেহের প্রোটিন থেকে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও সেখান থেকে অ্যামোনিয়া তৈরি করে।
3) নাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাটির অ্যামোনিয়াকে নাইট্রাইট ও শেষে নাইট্রেটএ পরিণত করে নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া (যেমন নাইট্রোসোমোনাস)। এছাড়া ডিনাইট্রিফিকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাটির নাইট্রোজেন যৌগ থেকে নাইট্রোজেন মুক্ত করে বায়ুতে ফেরত পাঠায় ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া (যেমন সিউডোমোনাস) বিলাসবহুল ও আরামদায়ক জীবনযাত্রার ফলে অর্থাৎ এসি, ফ্রিজ, ধূমপান এগুলি বাতাসে CFC, CO., Co এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে বায়ুদূষণ ঘটায়।
2. গঙ্গা নদীর দূষণের ফলে প্রাণী জীববৈচিত্র্যের বিপন্নতার দুটি উদাহরণ দাও। নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হওয়ার ফলে যেসব ঘটনা ঘটছে তার যে কোনো প্রধান তিনটি ঘটনা ব্যাখ্যা করো।
Ans: গঙ্গানদীর দূষণের ফলে প্রাণী জীববৈচিত্র্যের বিপন্নতার উদাহরণ হলো কচ্ছপ, গঙ্গার ঘরিয়াল।
নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হওয়ার ফলে ঘটে যাওয়া ঘটনা-
1) কৃষিতে অধিক পরিমাণে অ্যামোনিয়াম সালফেট সার হিসাবে ব্যবহার করার ফলে জাম আম্লিক হয়ে ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
2) নাইট্রাস অক্সাইড নামক গ্রিনহাউস গ্যাস বেড়ে যায় ফলে বায়ুদূষণ ও পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
3) বিভিন্ন অঞ্চলে অ্যাসিড বৃষ্টি নাইট্রোজেন চক্র ব্যাহত হবার ফলে হচ্ছে। ফলে মাটি, নদী, হ্রদের জলের অম্লতা বাড়ছে। এতে মাটিদূষণ ও জলদূষণ হচ্ছে।
3. " ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার একটি সমস্যা হলো বায়ুমন্ডলের পরিবর্তন এবং বিশ্ব উষ্মায়ন" পরিবেশে এর কী কী প্রভাব পড়তে পারে তার সারসংক্ষেপ করো। শীতকালে শিশু ও বয়স্কদের নানা শ্বাসজনিত সমস্যা দেখা যায় এরূপ দুটি সমস্যার নাম লেখো এবং তাদের একটি করে উপসর্গ বিবৃত করো।
Ans: পরিবেশে এর প্রভাবগুলি হলো:
1) সমুদ্রতলের জলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে ফলে সমুদ্রতীরবর্তী অনেক শহর জলের তলায় তলিয়ে যাবে এবং অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী তথা জীববৈচিত্র্যের অবুলপ্তি ঘটবে।
2) অতিরিক্ত বৃষ্টি হতে পারে ফলে বন্যার সৃষ্টি হবে আবার অতিরিক্ত পরিবেশের তাপমাত্রা বাড়তে পারে ফলে উদ্ভিদ ও প্রাণী তথা মানুষের বাঁচার পক্ষে অত্যাধিক কষ্টকর ঘটনা হতে পারে। আবার অ্যাসিড বৃষ্টি হতে পারে ফলে মাটি ও জলাশয়ের জল আম্লিক হয়ে পড়বে। এতে মাটিতে ফসল উৎপাদন কমে যাবে। আবার অন্যদিকে জলদূষণ হবে ফলে জলের উদ্ভিদ ও প্রাণী মারা যাবে। শীতকালে শিশু ও বয়স্কদের দুটি শ্বাসজনিত সমস্যা হলো অ্যাজমা ব্রঙ্কাইটিস।
অ্যাজমার উপসর্গ: শ্বাসকষ্ট ও বুকের মধ্যে সাঁই সাঁই আওয়াজ অত্যাধিক হারে তরল মিউকাস উৎপন্ন হয়। ব্রঙ্কাইটিস-বুকে ব্যথা কফ্ ওঠা, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট।
4. ওজোন হোল (Ozon Hole) কী? এর কারণ ও প্রভাব উল্লেখ করো
Ans: ওজোন হোল: বায়ুমণ্ডলের 20-30 কিলোমিটার উচ্চতায় স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার অবস্থিত। এই স্তরটি ওজোন গ্যাসের আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে। পরিবেশ দূষণের ফলে ওজোনের এই স্তরটি ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বড়ো ফাটল বা গহ্বরের সৃষ্টি করে, তাকে ওজোন ছিদ্র বা Ozon Hole বলে
ওজোন ছিদ্র সৃষ্টির কারণ: 1) শীতাতপ যন্ত্রের ব্যবহারে উৎপন্ন CFC,বাতাসের সঙ্গে মিশে স্ট্রাটোস্ফিয়ারে ছড়িয়ে পড়ে এবং ওজোন স্তরকে ধ্বংস করে। 2) মানুষের সৃষ্ট অন্যান্য দূষক পদার্থ নাইট্রাস অক্সাইড (N.O) কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCL), মিথাইল ব্রোমাইড (CH, Br) ইত্যাদি ওজোন হোল সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। 3) দ্রুতগামী সুপারসোনিক বিমান স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ভেদ করে যাওয়ার সময় ওজোন হোল সৃষ্টি হয় |
ক্ষতিকারক প্রভাব: 1) ওজোন ছিদ্র সৃষ্টির ফলে বিভিন্ন ক্ষতিকারক রশ্মি ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। ফলে ত্বকের ক্যানসার সৃষ্টি করে। 2) UV-B রশ্মির প্রভাবে চোখে ছানি পড়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। 3) প্রাণীদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। 4) পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং (Global Warming) এর কারণ 5) জুপ্ল্যাঙ্কটন ও ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন কমে যাওয়ার ফলে খাদক প্রাণীর খাদ্যাভাবে মৃত্যুর সম্ভাবনা বাড়ছে।
5. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে JFM (Joint Forest Management) - এর ভূমিকা আলোচনা করো। টাইগার প্রজেক্ট কী?
Ans: জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে JEM- এর ভূমিকা: JFM (Joint Forest Management) এর ভূমিকা: জয়েন্ট ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট (JFM) ভা রত সরকার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরের আরাবারি শালবনের নষ্ট হয়ে যাওয়া জঙ্গলকে বাঁচানোর জন্য 1971 সা লে ভারত সরকার সংস্থাটি গঠন করে। এতে বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে প্রতিনিধি বেছে নিয়ে তাদের বনজ সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ, এবং ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। 2005 সালের হিসেব অনুযায়ী ভারতের 27 টি রাজ্যে JFM চালু রয়েছে। এর ফলে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, গাছ কাটা থেকে মানুষকে সচেতন করা, মাটি সংরক্ষণ করা, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে।
টাইগার প্রজেক্ট: শিকারের কারণে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই বাঘ সংরক্ষণ করার জন্য ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে টাইগার প্রজেক্ট চালু হয়। বাঘকে স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচিয়ে রাখার এই পরিকল্পনাকে টাইগার প্রজেক্ট বা ব্যাঘ্র প্রকল্প বলে। টাইগার প্রজেক্ট এর ফলে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনে টাইগার প্রজেক্ট আছে।
0 Comments
Please do not enter any spam link in the comment box.